আমাদের অনেকেরই ধারণা ফেসবুকে বুস্টিং করলেই বিক্রি বেড়ে যাবে। অবশ্য এ ধারনার পেছনে কারণ, বুস্টিং কোম্পানিগুলোর অত্যন্ত চটকদার বিজ্ঞাপন। একটু চিন্তা করে দেখুন, আপনি যখন ফেসবুক এর হোমপেজ স্ক্রল করেন, তখন আপনিও কিন্তু অজস্র স্পন্সর্ড পোস্ট দেখেন, আপনি সেখান থেকে কয়টা প্রোডাক্ট ক্রয় করেন? ঠিক একইভাবে অন্য একজন যখন আপনার বিজ্ঞাপন হোমপেজে দেখবে এবং আপনার পণ্য ক্রয় করবে বা সার্ভিস নেবে, এমনটা আশা করা ঠিক না।
তবে কি বুস্টিং করবেন না?
উত্তর, অবশ্যই করবেন। তবে শুধু বুস্টিং করলেই হবে না, এর সাথে আরও কিছু করতে হবে।
প্রথমত বুস্টিং করতে হবে সঠিক নিয়মে। ফেসবুকের বিভিন্ন গাইডলাইন আছে বুস্টিং এর ক্ষেত্রে। একটা ছবির সাইজ কত হবে, ছবিতে কতটুকু লেখা দেয়া যাবে। এরপর টার্গেট কাস্টমার ও এলাকা নির্বাচন অনেক গুরুতবপূর্ণ। এরকম অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। এ বিষয়গুলোর জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা এজেন্সির সহায়তা নেয়া ভাল।
অফিস
এরপরে আপনার ফেসবুক পেইজকে কাস্টমারদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতে হবে। কেননা একজন ক্রেতা কিন্তু আপনার মন বা চিন্তাকে জানে না বা দেখে না, সে শুধু দেখে আপনি পেজে কি দিয়েছেন।
অফিস খুব গুরুতবপূর্ন। আপনার যখন অফিস থাকবে, তখন একজন ক্রেতা আপনাকে ফ্রড ভাববে না। কেননা সে জানে, কোন সমস্যা হলে সে অফিসে যোগাযোগ করতে পারবে। এর মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার আস্থা তৈরি হবে।
ওয়েবসাইট
আর একটি গুরুতবপূর্ন জিনিস হচ্ছে ওয়েবসাইট।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এর উপকারিতাঃ
ব্যবসা সম্পর্কে ক্রেতাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
খুব সহজের ক্রেতারা আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করে ধারণা লাভ করতে পারবে।
পেমেন্ট মেথড রাখলে ক্রেতারা খুব সহজেই আপনার কাছ থেকে জিনিস ক্রয় করতে পারবে এবং পেমেন্ট নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়াতে পারবেন।
ওয়েবসাইটকে এস ই ও (SEO) করে রাখলে মার্কেটিং খরচ অনেক কমে আসবে।
আপনি আপনার পছন্দমত ওয়েবসাইটকে সাজাতে পারবেন। যেমন ধরুন আপনি মেকাপ প্রোডাক্ট এর জন্য ওয়েবসাইট বানাতে চান এবং গোলাপী রঙ দিয়ে সাজাতে চান। নিজস্ব ওয়েবসাইটে আপনি খুব সহজেই এটা করতে পারবেন।
সুন্দর ছবি
মানুষ সুন্দর এর পুজারী। সুতরাং আপনার পেজকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ধরুন, আপনি পেজে দিয়েছেন মোবাইল দিয়ে তোলা একটা খুবই সাধারণমানের ছবি। আর অন্য একজন একই প্রোডাক্ট এর ছবি প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের দিয়ে তুলে গ্রাফিক ডিজাইনারকে দিয়ে ডিজাইন করে পেজে দিল। খুব স্বাভাবিক, মানুষ ২য় পেজেই ভিজিট করবে এবং অর্ডার দেবে। একটা সুন্দর ছবি বা ভিডিও দেখলে কিন্তু আপনিও আকৃষ্ট হবেন হয়ত ক্লিক করবেন ছবিটাতে। এতে বৃদ্ধি পাবে বিক্রি এর সম্ভবনা।
সুতরাং, বুস্টিং এর জন্য ব্যবহার করুন প্রফেশনাল ছবি ও ডিজাইন।
একটা সুন্দর লোগো, কভার ফটো, পোস্ট ইত্যাদি দেখলে যে কোন ক্রেতা আকৃষ্ট হতে বাধ্য।
পণ্যের চাহিদা
এ মুহুর্তে বাজারে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি, সেটা বুঝতে হবে। এজন্য বাজার রিসার্চ করতে হবে। যেমন ধরুন, আপনি যদি গরমকালে জ্যাকেট বিক্রি করতে হাজার হাজার টাকা বুস্ট করেন, দেখবেন, কেও কিনবে না। আবার শীতকালে ছাতা বিক্রি করতে চাইলেও বিক্রি হবে না।
ইদানিং অনেকেই বলছেন, তারা বুস্ট করছেন, কিন্তু সেল হচ্ছে না, তাদের অধিকাংশই জুয়েলারি বা জামা-কাপড় বিক্রি করছেন। প্রথমত এখন বিশ্বে একটা প্যান্ডেমিক চলছে। অধিকাংশ মানুষ আর্থিক সমস্যায় আছে। ঠিক এসময়ে সহজে জামা-কাপড় বা জুয়েলারি কিনতে চাইবে না।
বোধগম্যতা
ধরুন, আপনি খুব সুন্দর ছবি তুলে সেটিকে পোস্ট করলেন, ফেসবুকের নিয়ম মেনে পোস্টে কিছু লেখাও দিলেন। কিন্তু এমন একটা ফন্ট নির্বাচন করলেন, যেটি পড়তে খুব কষ্ট হয়, তখন আসলে সবকিছুই নষ্ট। কেননা যে মেসেজটি আপনি আপনার ক্রেতাদের দিতে চেয়েছেন, সেটি তারা পড়তে পারছে না।
অফার
অফার একটি গুরুতপূর্ন জিনিস। প্রতিটি ক্রেতাই চায় কোন না কোন অফার। এখত্রে অফার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে অফার একপার্টদের সাথে কথা বলুন।
রিভিউ
ক্রেতার রিভিউ খুবই গুরুত্বপুর্ণ। তবে সেটা আপনার পেজে একজন রিভিউ দিল, সেটা না, সকলেই জানে এরকম রিভিউ কিনতে পাওয়া যায় বা কাছের লোকদের দিয়ে এরকম রিভিউ দেয়া যায়। তাহলে কোন রিভিউ? সেটা হচ্ছে আপনার একজন ক্রেতা আপনার কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনে সে যখন অন্য একজনকে বলবে, সে আপনার কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনেছে এবং প্রোডাক্টটি ভাল। তখন ২য় ব্যক্তি আপনার কাছ থেকে প্রোডাক্টটি কিনতে আগ্রহী হবে। সুতরাং ক্রেতাদের কাছে সৎ থাকা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। মনে রাখবেন, আপনার ক্রেতাই আপনার প্রোডাক্ট এর ব্রান্ড এম্বাসেডর। আপনার ক্রেতাই আপনার প্রোডাক্ট এর মার্কেটিং অফিসার।
পেমেন্ট
পেমেন্ট অপশন অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। ক্রেতাকে আপনি যত বেশি অপশন দেবেন, ক্রেতা তত বেশি খুশি হবে। মনে রাখতে হবে, ক্রেতা কখনই লিমিটেশন পছন্দ করে না। ধরুন, আপনি শুধুমাত্র বিক্যাশ রাখলেন। কিন্তু একজন ক্রেতার কাছে বিক্যাশ নেই। তখন আপনি তাকে হারাবেন।
বাংলাদেশে এ মুহুর্তে সাধারণত মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, বিক্যাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদির মাধ্যমে অনলাইনে পেমেন্ট করা যায়।